"আসুন মক্তু মিয়ার কাছে ক্ষমা চাই
-----------
বাংলা নামের এই শ্যামল-কোমল দেশটিতে ১৯৭১ সালে একটি যুদ্ধ হয়েছিলো। পৃথিবীর একটি পরাক্রমশালী সেনাবাহিনী ‘পোড়ামাটি নীতি’ (মানুষ মেরে ঘরবাড়ি ধ্বংস করে কেবম পোড়ামাটি অবশিষ্ট রাখার প্ল্যান) নিয়ে নিরস্ত্র অপ্রস্তুত বাংগালীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। বাংলার দামাল তরুনেরা হানাদার সেই বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেছিলো ৯ মাস দীর্ঘ। সেই যুদ্ধে তাঁরা কোন সময় সম্মুখ কোন সময় চোরাগোপ্তা হামলায় পরাস্ত করেছিলো হানাদার বাহিনীকে। তাঁরা ছিলেন মুক্তিবাহিনী; মুক্তিযোদ্ধা।
এরকমই একটি গেরিলা দলের সাথে ছিলেন মক্তু মিয়া (পিতাঃ রইম উদ্দিন, গ্রামঃ ভিতরগড় প্রধানপাড়া, থানা পঞ্চগড় সদর)। তাঁর সম্পর্কে তাঁর দলের কোম্পানী কমান্ডার (৬-এ সাব-সেক্টর, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ৬) এ কে এম মাহবুব উল আলম লিখেছেন, “ ...তিনি হারিভাসা, অমরখানা, জগদল হাট, তালমা, পঞ্চগড় সদর সহ বিভিন্ন যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের পথ প্রদর্শক হিসাবে গুরুদায়িত্ব পালন করেন ও নিজে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং যুদ্ধের মাঠে অমিত সাহস ও বীর বিক্রমের পরিচয় দেন ।“
সেই মক্তু মিয়া ভিক্ষা (শাব্দিক অর্থেই) করছেন - এমন একটা অনলাইন সংবাদের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষিত হয় গত শীতে। আমরা তখন তাঁর একটু ঘুমানোর জায়গা, সামান্য কিছু কাপড় এবং পাশের এক বাড়িতে খাওয়ার ব্যবস্থা করি (তাঁর নিজের ছেলে মেয়ে তাঁকে ‘দেখে’ না, সাথেও থাকে না)। তখন এ নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। শুনেছি রাজশাহী-ঢাকার কয়েক স্থানে মক্তু মিয়ার জন্য ফান্ড রেইজিংও শুরু হয়।
সেই ঘটনার ৭ মাস পর আমরা সরজমিন দেখতে আসি মক্তু মিয়াকে। ৯ জুলাই ২০১৪ স্থানীয় সাংবাদিক ডিজার হোসেন বাদশা আর পঞ্চগড়ের বন্ধু কাজল কে নিয়ে আমি যাই প্রধানপাড়া।
যেয়ে যা দেখি তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। আমাদের চলন্ত জীপের সামনে দূরে রাস্তায় ধীর পায়ে হেটে চলা মক্তু মিয়াকে দেখি। তিনি তখন ভিক্ষার উদ্দেশ্যেই পথ চলছেন। আস্তে পিছনে যেয়ে জিপ থামাই। তারপর তাঁর সাথে থাকি এক ঘন্টা। কথা বলি। সব শেষে নিজের, দেশের ও আগামী প্রজন্মের সব বাঙ্গালির পক্ষ থেকে তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসি শহুরে জীবনে। আমাদের নিরন্তর হিপোক্রেসির শহুরে জীবন !
পুনশ্চঃ ১। চিকন লাঠি ধরতে অসুবিধা হয় আবার মোটা লাঠি হলে টানতে কষ্ট, তাই ন্যাকড়া দিয়ে লাঠিটাকে মোটা করেছেন। ২। মাইনাস ৯ এর চশমার একটা কাচ আর ফ্রেমের একটা অংশ পড়ে যেয়ে ভেঙ্গে গেছে। ভালো করে বেঁধে দেবার কেউ নেই। নিজেই কোন রকম ন্যাকড়া দিয়ে বেঁধে রেখেছেন।"

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন